টেকসই কৃষি: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজমি হ্রাস, রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও পরিবেশগত অবনতির কারণে কৃষি খাতের টেকসইতা আজ হুমকির মুখে। এই প্রেক্ষাপটে টেকসই কৃষি (Sustainable Agriculture) কেবল সময়ের দাবি নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পথ।
টেকসই কৃষির ধারণা
টেকসই কৃষি বলতে বোঝায় এমন একটি কৃষি ব্যবস্থা যা পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও অর্থনৈতিক লাভজনকতা বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন বজায় রাখতে সক্ষম। এটি প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতি এবং কৃষকের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশে টেকসই কৃষির প্রয়োজনীয়তা
-
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বেড়ে গেছে
-
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটি ও পানির গুণগত মান হ্রাস
-
কৃষিজমির সংকোচন ও শিল্পায়ন
-
কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং লাভের ঘাটতি
-
পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি
বাংলাদেশে টেকসই কৃষির সম্ভাবনা
-
জৈব সার ও কম্পোস্ট: গৃহস্থালির বর্জ্য, গোবর, সীউইড, খৈল ও অন্যান্য জৈব উপাদান ব্যবহার করে সার তৈরি।
-
বহুমুখী কৃষি ব্যবস্থা: ধান-হাঁস-মাছ বা শাকসবজি-ফল-গবাদিপশুর সমন্বিত খামার।
-
Rooftop Farming: শহরাঞ্চলে ছাদে শাকসবজি উৎপাদন।
-
জলবায়ু সহিষ্ণু জাত: খরা, লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল জাতের ফসল।
-
ICT in Agriculture: iKrishibid, কৃষি কল সেন্টার, মাটি পরীক্ষার মোবাইল অ্যাপ।
চ্যালেঞ্জসমূহ
-
কৃষকদের প্রশিক্ষণের অভাব ও সচেতনতার ঘাটতি
-
বাজারে জৈব পণ্যের স্বীকৃতি ও ন্যায্য দাম না পাওয়া
-
আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্প ব্যবহার
-
কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ কম
-
অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার
করণীয়
-
কৃষক প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা
-
ভর্তুকি ভিত্তিক জৈব সার ও বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট সরবরাহ
-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেকসই কৃষি বিষয় অন্তর্ভুক্ত
-
বাজারে জৈব ও নিরাপদ খাদ্যের আলাদা শেলফ ও লেবেলিং
-
যুবকদের স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা হিসেবে কৃষিতে যুক্ত করা
-
নারী কৃষকদের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা
-
কৃষি বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট ও বায়োগ্যাস উৎপাদন
উপসংহার
বাংলাদেশে টেকসই কৃষি শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ, কৃষকের মর্যাদা রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টিকে থাকার অবলম্বন। সরকারি, বেসরকারি ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টেকসই কৃষির ধারা নিশ্চিত করা সম্ভব। কৃষিকে যদি আমরা “সবুজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি” হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তবে টেকসই ভবিষ্যৎ আর কল্পনা নয়—বাস্তবতা হবে।
No comments:
Post a Comment